দেবারতি ঘোষ,কলকাতা :- ভারতে পারকিনসন্স রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। যথেষ্ট সংখ্যক রোগী তাদের প্রধান কাজের বছরগুলিতে মোটর বা গতিবিধি সংক্রান্ত নানা সমস্যার লক্ষণগুলির সূত্রপাত অনুভব করছেন, তবুও অনেকেই ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন (ডিবিএস) এর প্রতিশ্রুতি সম্পৰ্কে জানেন না।ডাঃ অনির্বাণ দীপ ব্যানার্জী মেদান্তা গুরুগ্রামে এই অত্যাধুনিক নিউরোস্টিমুলেশন পদ্ধতিটির সাহায্যে কলকাতার বাসিন্দা মিঃ কাজলবরণ মজুমদারের মতো জটিল স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত কয়েকশো রোগীকে সহায়তা করেছেন। কাজল বরণ বাবু, প্রতিবন্ধী হওয়ার দ্বারপ্রান্ত থেকে আবার স্বাধীন জীবনযাপনে ফিরে এসেছিলেন। ভারতের অন্যতম অগ্রণী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল মেদান্তা নিউজ উইক দ্বারা ভারতের সর্বোত্তম বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে মনোনীত হয়েছে। ডিবিএস থেরাপির জন্য এটি ভারতের অন্যতম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গন্তব্য যেখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে সর্বাত্মক চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া হয়।
ডক্টর অনির্বাণ দীপ ব্যানার্জি ডিরেক্টর নিউরো সার্জারি ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সেস মেদান্তা গুরুগ্রাম বলেন, "সারা বিশ্ব জুড়ে বর্তমানে নিউরোলজিক্যাল পরিস্থিতি শারীরিক অক্ষমতার অন্যতম বড় কারণ।গত কয়েক দশকে এ সংক্রান্ত অসুস্থতা এবং অক্ষমতার শিকার হওয়ার ঘটনা ক্রমবর্ধমান। ভারতে এই পরিমাণ মোট রোগের প্রায় ১০%। ডিবিএস এর মত চিকিৎসার কার্যকারিতা অতি আধুনিক সুবিধা রোগীদের জীবনকে পরিবর্তন করতে সাহায্য করতে পারে। মিস্টার মজুমদারের ক্ষেত্রেও একইভাবে সুগম্যতা একটা বড় সমস্যা ছিল। সাধারণত নিম্ন এবং মধ্য আয়ের দেশ গুলিতে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। মেদান্তাতে আমরা ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশন এর মত অত্যাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা দিয়ে মানুষকে আরো সচল করে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চিরাচরিত ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি এই ধরনের সমস্যার মোকাবিলা যেখানে সহজে করতে পারেনা সেখানে আমরা রোগীদের তাদের জীবন যাপনকে আরো উন্নত করতে সাহায্য করি। ডিবিএস বাহ ব্রেন পেসমেকার সার্জারি এমন একটি রূপান্তর মূলক চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে সুনির্দিষ্ট ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে ইলেক্ট্রোড স্থাপন করা হয় যা এডভান্স স্টেজের পারকিনশনের ডিস্টোনিয়া এপিলেপসির মত সমস্যা থেকে মস্তিষ্ককে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করতে পারে। এটি মস্তিষ্কে অনিয়মিত সিগন্যাল কে নিয়ন্ত্রণ করে, বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সচল রাখে ফলে জীবন যাপনের মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়। অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার বা ওসিডির সমস্যা ও এর ফলে সেরে যায় কমে আসে হাত-পায়ে কম্পন।"
মিস্টার মজুমদার সম্মতি দিলেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক অফিসার মজুমদার বাবু দীর্ঘদিন পারকিনসেন্স এর কারণে সঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। মাত্র ৫০ বছর বয়সে তার শরীরে মোটর সিম্পটম দেখা যায়। "আমার বাবারও এই একই রোগ ছিল। তাই আমি জানতাম যে আমারও এটাই হতে চলেছে", তিনি বলেন। যদিও তিনি এই সমস্যাকে নিজের কাজকর্মে তেমন প্রভাব ফেলতে দেননি কিন্তু অবসরের কালে যখন তিনি আরামের জীবন যাপনের প্রস্তুতি শুরু করছেন সেই সময় এই রোগের তীব্রতা বাড়ে।ডিবিএস এর মাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে মিস্টার মজুমদার জানালেন,"আমি সব জায়গায় হাঁটতে ভালবাসি। কিন্তু পারকিনসনের অ্যাডভান্স স্টেজের কারণে আমার মেরুদন্ড ক্রমশ বেঁকে যেতে থাকলো এবং আমি প্রায় পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়লাম। আমার মনে আছে যে কিভাবে মেদান্ত হাসপাতালে ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশন ট্রিটমেন্ট আমার বন্ধু মিস্টার অশোক কুমার সেনের জীবনকে পাল্টে দিয়েছে। ডাক্তার অনির্বাণ দীপ ব্যানার্জি আমার সার্জারি করেছেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আমার শরীরের বিভিন্ন লক্ষণে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। এখন মাঝে মাঝে আমার ব্রেন পেসমেকার ডক্টর ব্যানার্জি টিউন করে দেন ফলে আমার সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমি এখন যে কোন কাগজে সই করতে পারি অনেক দূর হেঁটে যেতে পারি এবং পরিবারের সঙ্গে সহজেই ছুটি কাটাতেও পারি।"
মেদান্তা গুরুগ্রামে ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশনের সঙ্গে অশোক কুমার সেন সারভাইক্যাল ডিস্টোনিয়ার ক্রমবর্ধমান সংস্থাগুলির মোকাবিলা করতে পেরেছেন। এই রোগ তার ঘাড়কে প্রায় থাই ভাবে যন্ত্রণাদায়ক ৯০ ডিগ্রি বাঁকিয়ে দিয়েছিল। এই অবস্থাতেই তিনি এক মেদান্তা গুরুগ্রামে ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশনের সঙ্গে অশোক কুমার সেন সারভাইক্যাল ডিস্টোনিয়ার ক্রমবর্ধমান সংস্থাগুলির মোকাবিলা করতে পেরেছেন। এই রোগ তার ঘাড়কে প্রায় থাই ভাবে যন্ত্রণাদায়ক ৯০ ডিগ্রি বাঁকিয়ে দিয়েছিল। এই অবস্থাতেই তিনি এক দশক কাটিয়েছেন। "৫০ বছর বয়সে যখন আমার হাত-পা কাঁপতে আরম্ভ করল আমার কাঁধেও অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঝাঁকুনি অনুভব করতাম। আমি মনে মনে ভাবছিলাম যে অবসর জীবন আমার জন্য কতটা যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠতে চলেছে। এরকম পরিস্থিতিতে পরিবারের উপর যেন আমি বোঝা হয়ে উঠছিলাম, যন্ত্রণা এবং আত্মসম্মানের অভাব বোধ করলাম। দীর্ঘ কয়েক বছর বটক্স থেরাপি এবং নানারকম ওষুধের ব্যবহারের পর ডঃ অনির্বাণ দীপ ব্যানার্জীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হলো। আর তারপরের কাহিনী পুরোটাই ইতিহাস", মিস্টার সেন বললেন।
সার্জারির পরে তার মাথা পুরোপুরি আগের অবস্থানে ফিরে এসেছে এবং ব্যথাও সম্পূর্ণভাবে কমে গেছে মিস্টার সেন এখন সম্পূর্ণভাবে ওষুধমুক্ত এবং সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। মাঝে মাঝে ব্রেন সিগন্যালের টিউনিং এর জন্য তিনি কলকাতায় মেদান্তা ওপিডি তে ডক্টর অনির্বাণ দ্বীপ ব্যানার্জীর কাছে আসেন।
0 Comments