কলকাতা, অক্টোবর, ২০২১: পূর্ব ভারতে প্রথমবার, অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা গর্ভাবস্থায় ব্লাড ট্রান্সফিউশনের মাধ্যমে নবজাতককে একটি নতুন জীবন দান করেছেন। রিমার গর্ভাবস্থার ২৪তম সপ্তাহে ভ্রূণের হাইড্রপের মত একটি বিরল জটিলতা চিহ্নিত হয় যেখানে ভ্রূণের সাথে ফ্লুইড মিশে গিয়ে শিশুটির রক্তাল্পতা তৈরি করে।
গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের হাইড্রপ একটি বিরল সমস্যা (১০,০০০ এর মধ্যে ১জন) যা দ্বিতীয় গর্ভধারণের সময় হয় যেখানে মায়ের ব্লাড গ্রুপ A- (নেগেটিভ) এবং বাবার ব্লাড গ্রুপ থাকে B+ (পজিটিভ)। এই ধরণের ক্ষেত্রে যদি প্রথম সন্তান পজিটিভ ব্লাড গ্রুপ নিয়ে জন্মায়, তবে মায়ের শরীরের সাথে প্রসবের পরে অবশিষ্ট পজিটিভ কোষগুলির লড়াই করার সম্ভাবনা থাকে। এই অ্যান্টিবডিগুলির উপস্থিতি দ্বিতীয় গর্ভধারণের সময় গর্ভাবস্থায় থাকা শিশুটির ওপর প্রভাব ফেলে। তাই ভ্রূণের রক্ত তরলে পরিণত হয় এবং শিশুর বুক, পেট ও চামড়ার নীচে মিশে যায়। এটি কত তাড়াতাড়ি শনাক্ত করা যাচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে ভ্রূণের হাইড্রপ সহ শিশুদের মৃত্যুর হার ৫০% থেকে ৯০% পর্যন্ত হয়।
ডঃ মল্লিনাথ মুখার্জী, অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল বলেছেন, "এইসব ক্ষেত্রে শিশুটির জীবন বাঁচানোর জন্য ভ্রূণের ব্লাড ট্রান্সফিউশনই একমাত্র পথ। এমনকি চিকিৎসার পরেও এই ধরণের শিশুদের বেঁচে থাকার হার অতন্ত্য কম। এই ক্ষেত্রে আমরা ৬টি ব্লাড ট্রান্সফিউশনের পর গর্ভাবস্থার ৩৫তম সপ্তাহে সফলভাবে শিশুটিকে প্রসব করাতে সক্ষম হয়েছি। এই বিশেষ ক্ষেত্রে আমরা রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে কৃতজ্ঞ আমাদের ওপর বিশ্বাস রেখে অনুমতি দেওয়ার জন্য।"
ডঃ কাঞ্চন মুখার্জী, অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল যিনি ব্লাড ট্রান্সফিউশনটি করেছেন, বলেছেন, "ভ্রূণের মধ্যে ব্লাড ট্রান্সফিউশন অতন্ত্য সূক্ষ্ম এবং জটিল কাজ তাই এই প্রক্রিয়া চলাকালীন আমাদের শিশুটির এবং মায়ের সর্বোচ্চ যত্ন নিতে হয়েছিল। ছয়টি ট্রান্সফিউশনের মাধ্যমে আমরা শিশুটির হিমোগ্লোবিন মাত্রা ৩ থেকে ১০ পর্যন্ত বাড়াতে পেরেছি এবং সময়মতো প্রসবের ব্যবস্থা করতে পেরেছি।"
ডঃ জয়ন্ত কুমার গুপ্ত, ডিরেক্টর এবং এইচওডি প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিদ্যা, অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল, কলকাতা বলেছেন, "আমরা এখানে অ্যাপোলোতে পূর্ব ভারতে প্রথমবারের মত একটি গর্ভস্থ শিশুর ব্লাড ট্রান্সফিউশন করেছি এবং ভ্রূণের হাইড্রপের মত এই বিরল অবস্থা থেকে শিশুটির জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছি। ট্রান্সফিউশনের পরেও, প্রসবের সঠিক সময় নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভস্থ শিশুর ব্লাড ট্রান্সফিউশনে বেশ কিছু ঝুঁকি থাকে যেমন গর্ভে সংক্রমণের ফলে অকাল প্রসব, অত্যাধিক রক্ত সঞ্চালনের ফলে শিশুটির হার্ট ফেইল এমনকি রক্তটি মায়ের কাছে পৌঁছলে মায়ের মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে।"
গর্ভাবস্থায় এই ধরনের সমস্যা এড়াতে বিয়ের আগে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। অ্যান্টি ডি ইমিউনো গ্লোবুলিনের মতো বেশ কিছু প্রতিষেধক রয়েছে, যা প্রথম প্রসবের পর মায়েদের দেওয়া হয় দ্বিতীয় গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের হাইড্রপ প্রতিরোধ করার জন্য।
0 Comments