ডিজিটাল ডেস্ক:- কলম! তিন অক্ষরের একটি শব্দ। কিন্তু তা দিয়ে যেমন ফুটে ওঠে সৃজনশীলতা তেমনিভাবেই কলমের মধ্যে রয়েছে এমন শক্তি যা পাল্টে ফেলতে পারে ইতিহাস। এর আগে কলমের শক্তি আমরা অনেকবার দেখেছি।
কোথায় জন্ম এই কলমের ? সভ্যতার প্রথম দিকে বর্তমান সময়ের যে সমস্ত কলম আমরা দেখি সেরকম ছিলনা। পরবর্তীকালে কিছু বিবর্তনের পর আসে ফাউন্টেনপেন বা ঝর্ণা কলম। পেনের ভেতর কালি ভরে তা লিখতে হতো কাগজের ওপর। ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে দেখা যাবে ৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ঝর্না কলম তৈরি হয়।
মিশরের সম্রাট মা’দ আল-মুয়িজ এমন একটি কলমের চিন্তাভাবনা করেন যা হাত এবং কাপড় কে নষ্ট করবে না। কথিত আছে সেই থেকেই এই কলমের জন্ম। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ফাউন্টেন পেনের নাম দিয়েছিলেন ঝর্না কলম।
তারপর যুগ পরিবর্তন হয়েছে, পরিবর্তন হয়েছে কলমের কালির। পরিবর্তিত হয়েছে কলম এর ধরনগুলি। ফাউন্টেন পেন বদলে আসলো জেলপেন-বলপেন।
বর্তমানে ফাউন্টেনপেন আমাদের জীবন থেকে ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে, তাই সেই ফাউন্টেন পেন কে মনে রাখার জন্য কিশলয় ইভেন্ট এন্ড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট এবং তার সহযোগী পেন ক্লাব কলকাতার আইসিসিআর এ আয়োজন করেছে পেন মহোৎসব ২০২২ । নেপথ্যে তিনজন। সুব্রত দাস, শায়ক কুমার আঢ্য, এবং প্রসেনজিৎ গুছাইত।
১৫ এপ্রিল থেকে অর্থাৎ নববর্ষের দিন থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত এই মহোৎসব চলবে।
সব মিলিয়ে ২২ থেকে ২৩ টি স্টল এখানে রয়েছে। স্টলে রয়েছে বিভিন্ন ফাউন্টেন পেনের অভিজাত সংস্থাগুলি। যারা নিজেরা ফাউন্টেন পেন তৈরি করেন কিংবা বিভিন্ন জায়গা থেকে এই পেন আমদানি করেন।
যেমন রয়েছে ৫০০ টাকার পেন তেমনি অভিজাত ধরনের ফাউন্টেন পেনের মূল্য রয়েছে এক লাখ টাকারও বেশি।
আয়োজকদের মূল উদ্দেশ্য শুধু পেন বিক্রি নয় এই ফাউন্টেন পেনের প্রচলন কে আবার তুলে ধরা। আমাদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখা।
উপস্থিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, এই ধরণের অনুষ্ঠানে এসে আমার খুব ভালো লাগছে। আমি ইতিহাসের ছাত্র। এই মহোৎসব ঐতিহাসিক ফাউন্টেন পেন এর উপযোগিতা এবং ইতিহাসকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। কলম যাতে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক হয় তার দায়িত্ব আমাদের। আমরা কিভাবে তা ব্যবহার করব তার দায়িত্ব আমাদেরই। শান্তির পৃথিবী তৈরি হয় সেই দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। একজন ছাত্র কিভাবে তৈরি হবে তা শিক্ষক এর অন্যতম দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ফাউন্টেন পেন ব্যবহারের জন্য সাধারণ মানুষকে আরো বেশি করে জাগ্রত করতে হবে।
প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি শুভ্র কমল মুখার্জি বলেন, দু'বছর আমরা খুব খারাপ সময় কাটিয়েছি। এই পেন মহোৎসবে এসে খুব ভালো অনুভূতি হচ্ছে। দেশি পদ্ধতিতে আমাদের দেশের প্রস্তুতকারকরা যে পেন নিয়ে আসছেন তা যদি আমরা কিনি তাহলে এই শিল্পের সাথে যুক্ত বহু মানুষের উপকার হয়। দিনে দিনে এই উৎসবের শ্রীবৃদ্ধি হোক তা আমরা প্রার্থনা করি।
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ড: স্বাথী গুহ,ডিরেক্টর ইনস্টিটিউট অফ ল্যাঙ্গুয়েজ স্টাডিস এন্ড রিসার্চ, শিউলি রামানী গোমস, চিত্র পরিচালক,সুরঞ্জন দে,চিত্র পরিচালক,হুসেন মুস্তাফি,বিশিষ্ঠ ফুটবলার,নাসির আহমেদ, বিশিষ্ট ফুটবলার,বিমল দে,সেক্রেটারি EIMPADA, নুপুর মুখার্জি, ড্যান্স থেরাপি,অনিন্দিতা সিনহা,ইমন কর্নধর, সুরভি দাস,মডেল,মৌমিতা সাহা,ফ্যাশন ডিজাইনার, সায়নদ্বীপ রায়,ফটোগ্রাফার।
আয়োজকরা জানান আমাদের এই ধরনের প্রচেষ্টা প্রথম। আগামী দিনে এই পেন মহোৎসব আরো বড় জায়গা নেবে তা আমরা আশা রাখছি। ফাউন্টেন পেনের দিকে মানুষকে আগ্রহ বাড়ানোর আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
তারা আরো জানান ফাউন্টেন পেন ব্যবহার করলে হাতের লেখা খুব সুন্দর হয়। আমরা সবার কাছে আবেদন করছি যে আবার পুনরায় সবাই যেন ফাউন্টেন পেন ব্যবহার করেন তাহলে এই শিল্প বাঁচবে, বেঁচে থাকবে আমাদের ঐতিহ্য।
0 Comments