Header Ads Widget

Responsive Advertisement

পূর্ব ভারতে প্রথমবার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালটি হসপিটালের ডাক্তাররা ইন্টারস্টিশিয়াল লেসার থেরাপির সাহায্যে একটি গর্ভস্থ শিশুকে নতুন জীবন দিলেন


কলকাতা, অক্টোবর ২০২১:
পূর্ব ভারতে প্রথমবার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালটি হসপিটালের ডাক্তাররা ডায়োড লেসার ব্যবহার করে লেসার থেরাপির সাহায্যে একটি গর্ভস্থ শিশুকে নতুন জীবন দিয়েছেন। ইন্টারস্টিশিয়াল ডায়োড লেসার থেরাপিতে একটি সূক্ষ্ম সূঁচ মায়ের জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়। তা থেকে কিছু লেসার বিম বেরিয়ে রুগ্ন শিশুটির শরীরে প্রবেশ করে, ফলে তার মৃত্যু হয়। এমন করা হয় যাতে সুস্থতর যমজটিকে বাঁচানো যায়। আল্ট্রা সাউন্ডের অবিরাম সহায়তায় এই প্রোসিডিওর চালানো হয়।

আজকাল অনেকেই বেশি বয়সে বাবা-মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং সেই কারণে IVF-এর ব্যবহার বেড়ে গেছে। এর ফলে যমজ সন্তানের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। এই মুহূর্তে প্রতি পঞ্চাশজন গর্ভবতী মহিলার একজনের গর্ভে যমজ সন্তান পাওয়া যাচ্ছে, আর যমজ সন্তানবিশিষ্ট গর্ভাবস্থার ঝুঁকি সবসময় বেশি। যমজ গর্ভাবস্থার ৬৬% হল ডাইকোরিয়োনিক (২টি পৃথক ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু থেকে ভ্রূণগুলি তৈরি হয় এবং জরায়ুর মধ্যে পৃথক প্রকোষ্ঠে পৃথক রক্তপ্রবাহে পুষ্ট হয়) আর ৩৩% মনোকোরিয়োনিক (১টি ডিম্বাণু এবং ১টি শুক্রাণু থেকেই ভ্রূণগুলি তৈরি হয় এবং জরায়ুর মধ্যে একই প্রকোষ্ঠে একই রক্তপ্রবাহে পুষ্ট হয়)।

মনোকোরিয়োনিক গর্ভাবস্থায় এক ধরনের ক্রস (সিলেক্টিভ) ইন্ট্রাইউটেরাইন গ্রোথ রেস্ট্রিকশনের প্রবল সম্ভাবনা থাকে, যার নাম টুইন-টু-টুইন-ট্রান্সফিউশন সিনড্রোম (TTTS)। এটি জন্মের আগেই যমজদের মৃত্যুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এটা প্রায় ১০-১৫% মনোকোরিয়োনিক যমজ গর্ভাবস্থায় সাধারণভাবে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ঘটে। এর ফলে একটি শিশুর বৃদ্ধি আশানুরূপ হয় না এবং অন্যটির তুলনায় কম হয়। এরকম হওয়ার কারণ হল একই প্লাসেন্টা থেকে দুজনের জন্য রক্ত প্রবাহিত হওয়ার ফলে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়। একটি ভ্রূণ তথাকথিত দাতা এবং অন্যটি গ্রহীতায় পরিণত হয়।

এর চিকিৎসা না করালে মৃত্যুর আগেই এদের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। একজনের মৃত্যু হয় পুষ্টির অভাবে, অন্যজনের অতিরিক্ত পুষ্টির ফলে। দ্বিতীয়ত, যদি দুর্বলতর শিশুটির মধ্যে পুষ্টির অভাবের ফলে কোনো ক্লট বা কার্ডিয়াক ত্রুটি থাকে, তাহলে সেই সমস্যা প্লাসেন্টার মধ্যে দিয়ে সুস্থতর শিশুটির মধ্যে চলে যায় এবং জরায়ুর মধ্যে দুর্বলতর শিশুটির মৃত্যুর ৭২ ঘন্টার মধ্যে সুস্থতর শিশুটির মৃত্যু হয়। অ্যাপোলো হাসপাতালে হওয়া প্রোসিডিওরটির ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি ধরা পড়েছিল মা গর্ভবতী হওয়ার ১৪তম সপ্তাহে। তখন গর্ভের মধ্যে দুটি শিশুরই যথাযথ বৃদ্ধি নিশ্চিত করে দুজনকেই বাঁচানো অসম্ভব।

ইন্টারস্টিশিয়াল লেসার থেরাপি হল একমাত্র প্রোসিডিওর, যা অন্তত একটি শিশুকে বাঁচাতে পারে। ভ্রূণ ও প্লাসেন্টা দেখার জন্য আল্ট্রা সাউন্ডের সাহায্য নিয়ে, একটিমাত্র প্রোসিডিওরের মাধ্যমে, এই কৌশলে দুটি শিশুর মধ্যেকার ধমনীগুলি কেটে দেওয়া হয়। ফলে দুর্বলতর দাতা শিশুটির পুষ্টি বন্ধ হয়ে যায় আর সুস্থতর শিশুটি ফিটাসের মধ্যে বাড়তেই থাকে।

ডাঃ জয়ন্ত কুমার গুপ্ত, ডিরেক্টর অ্যান্ড এইচওডি অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গায়নকোলজি, অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালটি হসপিটালস, কলকাতা বললেন “বাবা-মায়েদের পক্ষে জন্মের আগেই যমজদের একজনকে ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া সত্যিই খুব শক্ত। কিন্তু দুজনের একজনকে বাঁচানোর এটাই একমাত্র পদ্ধতি। নইলে দুজনেই মারা যাবে। অ্যাপোলোতে আমরা পূর্ব ভারতে এই প্রথম ইন্টারস্টিশিয়াল লেসার থেরাপি করলাম, যাতে যমজদের একজনকে অন্তত বাঁচানো যায়। টুইন-টু-টুইন-ট্রান্সফিউশন সিনড্রোমের (TTTS) একটা কেসে এই চিকিৎসা প্রয়োগ করা হল। এই সমস্যাটা কেবল আইডেনটিকাল টুইনদেরই হয়, কারণ স্বভাবত তারা একই প্লাসেন্টা থেকে পুষ্ট হয়। আমরা আশা করছি আরও বেশি টুইন-টু-টুইন-ট্রান্সফিউশন সিনড্রোমে (TTTS) আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলার জন্য এই প্রোসিডিওর করতে পারব, যাতে তাঁরা ইন্ট্রাইউটেরাইন গ্রোথ রেস্ট্রিকশনের কারণে তাঁদের সন্তানদের না হারান। তার জন্যে গর্ভাবস্থায় USG সহ নিয়মিত চেক-আপের মাধ্যমে দ্রুত রোগনির্ণয় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।”

Post a Comment

0 Comments