ডিজিটাল ডেস্ক : বিজ্ঞানী থেকে সাধারণ মানুষ প্রায় সকলেরই এক মাথা ব্যথার অন্যতম কারণ হলো বেড়ে চলা বর্জ্য পদার্থ এবং সেই বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ।
দিনে দিনে এর পরিমাণ বেড়েই চলেছে। আগামী দিনে এই বিপুল পরিমাণে বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ প্রায় সকলের কপালে।
বর্জ্য থেকে কিভাবে প্লাস্টিক এবং অন্যান্য ধাতব পদার্থ বের করে নেওয়া, এবং তারপর সেই বর্জ্য কে বিভিন্ন উপায়ে এর মাধ্যমে আবার ব্যবহার করার এক অভিনব উদ্যোগ নিল নুরুলা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ছাত্র-ছাত্রীরা।
ইনস্টিটিউটের আট জন ছাত্রছাত্রী একটি টিম টার্বো সেপারেটর ( Tarbo Separator) নামে একটি যন্ত্র তৈরি করেন, যার মাধ্যমে বর্জ্য থেকে জাস্টিক এবং অন্যান্য ধাতব পদার্থ আলাদা করে। সেই বর্জ্য কে পুনরায় প্রকৃতির মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া যায়।
কিভাবে কাজ করে এই মেশিন:
প্রধানত এই মেশিনের তিনটে পর্যায়ে রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে মেশিনের মধ্যে বর্জ্য পদার্থ দিয়ে দিতে হবে। তারপরের পর্যায়ে সেই বর্জ্য গুলি থেকে বিশেষ উপায়ে ধাতব পদার্থকে তুলে নেওয়া এবং অধাতু পদার্থ কে প্রিস্টনের মাধ্যমে ভেঙে ফেলা হয়। তৃতীয় পর্যায় বর্জ্য গুলি একটি জলাধারের মধ্যে দেওয়া হবে সেখানে অপ্রয়োজনীয় হালকা পদার্থ গুলি ভেসে উঠবে এবং কিছু অংশ নিচে থিতিয়ে যাবে। উপরে ভাসমান অপ্রয়োজনীয় হালকা পদার্থ গুলি বিশেষ ছাকনির মাধ্যমে তুলে নেওয়া হবে এবং নিচে থেকে পড়া অংশগুলির সাথে বিভিন্ন জিনিস মিশিয়ে পুনরায় সার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই সম্পূর্ণ মডেলটি তৈরি করতে প্রাথমিকভাবে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকার আশেপাশে। জানান নুরুলা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ইলেকট্রনিক্স এন্ড ইন্সট্রুমেন্টেশন এর বিভাগীয় প্রধান Dr Bansari Deb Majumdar। তিনি আরো জানান কামারহাটি পৌরসভা কাছে তাদের এই প্রজেক্টটি নিয়ে আলোচনা করা হলে তারা এই প্রজেক্টটি কে সাধুবাদ জানান।
ড. মজুমদার বলেন, আমাদের কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের এটি একটি ছোট্ট প্রয়াস। এই মডেলটি যদি বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন করা যায় তাহলে আবর্জনা/ বর্জ্যের সমস্যা কিছু পরিমাণ মিটবে। আপাতত যে মডেল টি তৈরি করা হয়েছে তা ১০ কেজির মতন বর্জ্য থেকে একসময় বিভিন্ন উপাদান আলাদা করতে পারে।
উল্লেখ্য, জেআইএস গ্রুপের অন্তর্গত নারুলা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বৃহস্পতি ও শুক্রবার (৫ ও ৬ই মে) মার্চেন্টস চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহযোগিতায় টেকনো-ম্যানেজমেন্ট ইভেন্ট - 'কৃতাঞ্জ'-এর আয়োজন করছিল কলেজ ক্যাম্পাসেই।
এবছরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমাদের শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় - ভাগাড়ের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর এক অভিনব ধারণার সরাসরি বা লাইভ প্রদর্শন করা হয়েছিল আগরপাড়া স্টেশন রোডের কাছের ভাগার থেকে। এদিন প্রদর্শিত টার্বো বিভাজক প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল বর্জ্য পদার্থ আলাদা করা এবং সেগুলির পরিমান যথাসম্ভব হ্রাস করা।
সমগ্র রাজ্যের বিভিন্ন টেকনোলোজি কলেজ থেকে এই ফেস্টে অংশগ্রহন করেছিল প্রায় ৮০০০-এর ও বেশি ছাত্র-ছাত্রী। সবমিলিয়ে প্রায় ১২ লক্ষ টাকার পুরস্কারও জিতেছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। টেকনোলজিক্যাল সিম্পোজিয়াম, রোবোটিক্স বা কোডিং, ফুড ফাইট ইত্যাদি সহ প্রায় ৬০-এরও বেশি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। এটি রাজ্যের সম্ভবত এই প্রথম কোনো কলেজ যেখানে অল্প-বয়সী শিক্ষার্থীরা শহরের পরিছন্নতার ব্যাপারে সচেতনতা তৈরীর লক্ষ্য এরকম অভিনব প্রয়াস নিয়েছেন।
JIS গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর, তারানজিৎ সিং এই বিষয়ে উল্লেখ করেছেন, "একটি পরিচ্ছন্ন শহর এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশের জন্য অনন্য উদ্যোগ নেওয়ার জন্য, আমরা তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য একেবারে গর্বিত যারা নিঃসন্দেহে বিশ্বকে একটি ভাল জায়গা তৈরি করতে প্রস্তুত এবং আগামী বহু প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য।"
0 Comments