নিউজ ডেস্ক, ডিসেম্বর,২০২১: রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দ তাঁর বাংলাদেশ সফরের শেষ দিনে সেদেশে বসবাসরত ভারতীয় সম্প্রদায় এবং ভারতের বন্ধুদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত শ্রী বিক্রম কে দোরাইস্বামী।
রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেন, এই অনুষ্ঠানের আগে তিনি ঢাকায় নব-নির্মিত ঐতিহাসিক রমনা কালী মন্দিরের উদ্বোধন করেছেন। মু্ক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনী এই মন্দির ধ্বংস করে দিয়েছিল। বাংলাদেশ ও ভারতের জনসাধারণ যৌথভাবে এটিকে আবার গড়ে তুলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর হাতে বহু মানুষ প্রাণ হারান।
শ্রী কোবিন্দ বলেন ভারত ও বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের প্রতীক এই মন্দির।
শ্রী কোবিন্দ বলেন, ভারতীয়দের মনে বাংলাদেশের জন্য একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। উভয় দেশের অভিন্ন ভাষা সংস্কৃতি আমাদের পরস্পরকে পরস্পরের কাছে নিয়ে এসেছে। দুই দেশের এই সম্পর্ককে বিচক্ষণ নেতৃবৃন্দ আরও এগিয়ে নিয়ে গেছেন।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদেশের প্রগতিশীল, সমন্বিত, গণতান্ত্রিক ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পাশে ভারত সবসময়ই রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, উভয় দেশের অভিন্ন সম্পদ ও অভিজ্ঞতা দুই দেশের স্থিতিশীল উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। দু’পক্ষই আমাদের সমন্বিত, স্থিতিশীল ও পরিবেশ বান্ধব উন্নয়নের অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
শ্রী কোবিন্দ বলেন, যেহেতু ভূটান এবং নেপাল ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র তাই এই অঞ্চলের সব দেশের মধ্যে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ, যার মাধ্যমে এই অঞ্চলের উন্নয়ন নিশ্চিত হবে এবং মানুষের আকাঙ্খা পূরণ হবে। এই একই ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ভারত তাকে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক যোগাযোগের সুযোগকে কাজে লাগাতে তিনি দু-দেশের বাণিজ্য মহলকে পরামর্শ দেন। একাজে বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশে বসবাসরত ভারতীয় সম্প্রদায়ের ভূমিকার প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সেদেশের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভারতীয়রা যথেষ্ট অবদান রেখেছেন। শুধু তাই নয় তাঁরা দু’দেশের দীর্ঘদিনের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছেন। এই অঞ্চলের সমৃদ্ধির জন্য ভারতীয় সম্প্রদায়ের ভূমিকায় দেশ গর্ববোধ করে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অভিন্ন ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে তাঁরা মান্যতা দেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্বের যেকোন প্রান্তে বসবাসরত ভারতীয়দের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়। বিগত দেড় বছরে কোভিড মহামারীর সময়কালে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার সাহায্য করেছে। বিদেশে বসবাসরত ভারতীয় এবং ভারতীয় বংশোদ্ভুতদের সঙ্গে সরকার সবসময় যোগাযোগ রেখে চলে। বন্দে ভারত মিশন প্রকল্পে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশনের ভূমিকার তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
শ্রী কোবিন্দ বলেন, এই বছরটি একটি বিশেষ বছর। আমরা এ বছরে মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তী, বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকী, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর ৫০ বছর এবং ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন করছি। আমরা এই সময়কালে যা যা অর্জন করবো সেগুলি আমাদের উভয় দেশের জাতির জনকের উদ্দেশে উৎসর্গ করবো। ১৯৭১এর রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দুটি দেশের মধ্যে যে বন্ধন গড়ে উঠেছে তা ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে বলে তিনি আশা করেন।
0 Comments