ন্যাশনাল,৪আগস্ট,২০২১ঃ এশিয়ার অগ্রগণ্য ও সবচেয়ে বিশ্বস্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা গ্রুপ অ্যাপোলো হসপিটালস আজ একজন ৪১ বছর বয়সী পুরুষ কৃষকের সফল মিট্রাক্লিপ (MitraClip) ইমপ্ল্যান্টের কথা ঘোষণা করল। তিনি তিন মাসের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন হাসপাতালে হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় ছিলেন। প্রোসিডিওর হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই রোগী হেঁটে চলে বেড়াতে পারছেন। এমনকি হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন না-ও পড়তে পারে।
পৃথা রেড্ডি, এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারপার্সন, অ্যাপোলো হসপিটালস গ্রুপ, বলেন “ভারতের অল্প কিছু হাসপাতালেরই মিট্রাক্লিপ (MitraClip) প্রোসিডিওর করার অনুমোদন আছে, যার মধ্যে আমরা একটা। তাই হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা একজন রোগীর জীবন বাঁচানো আমাদের অন্যদের আশার আলো দেখানোর ক্ষমতা দিল। হৃদরোগে ভোগা মানুষদের মধ্যে ১০% পর্যন্ত রোগীর সিভিয়ার/এন্ড-স্টেজ হার্ট ফেলিওর হয়। গবেষণায় দেখা গেছে হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের সেতু হিসাবে মিট্রাক্লিপ (MitraClip) নিরাপদ। এমনকি এর ফলে কার্যক্ষেত্রে এমন উন্নতিও হতে পারে, যে রোগীর আর প্রতিস্থাপন দরকার হল না।
আমরা গর্বিত যে অ্যাপোলো হসপিটালসে একজন ৪১ বছর বয়সী পুরুষ রোগীর কেসের মাধ্যমে আমরা এটা দেখাতে পেরেছি, যিনি তিন মাসের বেশি সময় ধরে হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় ছিলেন। এই কেসের সাফল্য এই অত্যাধুনিক ও বৈপ্লবিক মেডিকাল উদ্ভাবন যাদের সবচেয়ে বেশি দরকার তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতি আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধতা নতুন করে তুলে ধরেছে। এই কেসগুলোর বেশিরভাগই দ্বিতীয় ঢেউয়ের সবচেয়ে সঙ্কটজনক মাসগুলোতে করা হয়েছে এবং তা সম্ভব হয়েছে কঠোর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ প্রোটোকল এবং হাসপাতালে যে লৌহ যবনিকা কোভিড আর নন-কোভিড রোগীদের আলাদা করে রেখেছে তার জন্যে।”
প্রতিস্থাপনের তালিকায় থাকা গুরুতর অসুস্থ রোগীদের সম্বন্ধে তৈরি ইন্টারন্যাশনাল মিত্রব্রিজ রেজিস্ট্রিতে পাওয়া ১১৯ জন রোগীর তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে ৮৭.৫% কেসে প্রোসিডিওরাল সাফল্য পাওয়া গেছে এবং ১০০% রোগী ৩০ দিন বেঁচেছেন।
ডাঃ সাই সতীশ, সিনিয়র ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, অ্যাপোলো হসপিটালস বললেন “মিট্রাক্লিপ (MitraClip) হল পলিয়েস্টার ফ্যাব্রিক সমেত একটা ছোট ধাতুর ক্লিপ, যা ফুটো হয়ে যাওয়া মাইট্রাল ভালভ মেরামত করার জন্য বসিয়ে দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে রক্তের প্রবাহ সঠিক দিকে হচ্ছে। হার্ট ফেলিওরের রোগীদের জন্য এটা সারা বিশ্বে স্বীকৃত এক প্রোসিডিওর। যে রোগীরা মডারেট থেকে সিভিয়ার বা সিভিয়ার প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি মাইট্রাল রিগার্জিটেশনে ভুগছেন এবং চিকিৎসায় উন্নতি হচ্ছে না, তাঁরা এই ন্যূনতম আক্রমণাত্মক সমাধান বেছে নিতে পারেন। এতে তাঁদের জীবনযাত্রার মান এবং স্বাস্থ্যের বিপুল উন্নতি হবে।”
ডাঃ সাই সতীশ আরও বলেন “তিন বছর হয়ে গেল আমরা যে রোগীদের উপযুক্ত মনে করি তাদের উপর এই প্রোসিডিওর করছি এবং প্রোসিডিওরের পর তাঁদের জীবনযাত্রার মানে অবিশ্বাস্য উন্নতি দেখেছি। এক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা বহু মাইলফলক স্পর্শ করার ক্ষমতা দিয়েছে, যার মধ্যে আছে এ বছরই কিছুদিন আগে একদিনে চারজন অত্যন্ত অসুস্থ রোগীর পরপর মিট্রাক্লিপ (MitraClip) ইমপ্ল্যান্ট। সেটা করা হয়েছিল অতিমারীর দ্বিতীয় ঢেউ তুঙ্গে থাকার সময়। এখন আমরা সকলের থেকে এগিয়ে গেছি। ভারতে আজ পর্যন্ত যত মিট্রাক্লিপ (MitraClip) হয়েছে তার ৭০% অ্যাপোলো হসপিটালসে হয়েছে এবং আমরা আগামী দিনে আমাদের যাত্রায় আরও বড় এবং আরও অভাবনীয় মাইলফলক স্পর্শ করার দিকে এগোচ্ছি।”
মিট্রাক্লিপ (MitraClip) ভারতে চালু হয়েছে মাত্র তিন বছর আগে। একজন রোগীর শরীরে প্রথম মিট্রাক্লিপ (MitraClip) ইমপ্ল্যান্ট হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৩ সালে। এই প্রোসিডিওর যুগান্তকারী এবং বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যবহার শুরু হয় ২০০৮ সালে ইউরোপে এবং ২০১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আজ পর্যন্ত ৫০টার বেশি দেশের ১০০,০০০-এর রোগী মিট্রাক্লিপ (MitraClip) প্রোসিডিওর করিয়েছেন।
যেসব দুর্বল এবং বয়স্ক রোগী প্রচলিত ওপেন হার্ট সার্জারি করাতে পারেন না, মিট্রাক্লিপ (MitraClip) ইমপ্ল্যান্ট তাঁদের নতুন জীবন দেয়। এই ন্যূনতম আক্রমণাত্মক মিট্রাক্লিপ (MitraClip) প্রোসিডিওর ফাংশনাল ও ডিজেনারেটিভ মাইট্রাল রিগার্জিটেশন --- দুটোতেই কার্যকরী। এই প্রোসিডিওর করা হয় পার্কুটেনাসলি এক ক্যাথ ল্যাবে এবং যে ডিভাইস ব্যবহার করা হয় তা খুলে নেওয়া যায় এবং তার স্থানও বদল করা যায়। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো এই প্রোসিডিওরের নিরাপদ হওয়ার অন্যতম কারণ। পরিশ্রম করে রোগী বাছাই করা সাফল্য নিশ্চিত করার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
প্রচলিত অস্ত্রোপচারের তুলনায় মিট্রাক্লিপ (MitraClip) প্রোসিডিওর করলে আবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এড়ানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে এটা বেশি সাশ্রয়কর এবং রোগীরা খুব অল্প সময়েই সুস্থ হয়ে উঠে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করতে পারেন।”
মিট্রাক্লিপ (MitraClip) নিয়ে ভারতের প্রথম দুটো বৈজ্ঞানিক পেপারই অ্যাপোলো হসপিটালস থেকেই প্রকাশিত হয়েছে। প্রথমটা প্রথম কেস সম্বন্ধে এবং দ্বিতীয় পেপারটা প্রথম সাতটা কেসের এক বছরের ফলো আপ সমেত, যেখানে অসামান্য ফলাফল দেখা গেছে। অ্যাপোলো হসপিটালসের ডাঃ সাই সতীশ মিট্রাক্লিপ (MitraClip) ইমপ্ল্যান্টের এপিএসি নির্দেশাবলী রচনা করার কাজে যুক্ত একমাত্র ভারতীয় লেখক। এশিয়ার প্রথম মিট্রাক্লিপ (MitraClip) প্রশিক্ষণ প্রকল্প, যাতে থিওরি এবং দুদিনে চারটে কেস ছিল, তা-ও অ্যাপোলো হসপিটালসেই হয়েছিল। সেই প্রকল্প ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজির সেন্টার অফ এক্সেলেন্স হিসাবে অ্যাপোলো হসপিটালসের স্থান পাকা করেছিল।।
0 Comments